স্পোর্টস ডেস্ক;
১৩০ রানের জয়ের লক্ষ্যে ৮৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে লড়াই থেকে অনেকটা ছিটকে পরে স্বাগতিক চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স; কিন্তু সপ্তম উইকেটে ২৬ বলে অবিচ্ছিন্ন ৪৫ রানের জুটি গড়ে সিলেটের বিপক্ষে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-২০ ক্রিকেটের দশম ম্যাচে চট্টগ্রামকে দারুণ এক জয়ের স্বাদ দিলেন উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কেসরিস উইলিয়ামস।
মঙ্গলবার শুরু হওয়া চট্টগ্রাম পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে সিলেটকে ৪ উইকেটে হারের স্বাদ দেয় স্বাগতিকরা। ৪ ম্যাচে ৩ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে এককভাবে টেবিলের শীর্ষে উঠলো চট্টগ্রাম। আর ৪ ম্যাচের সবক’টিতেই হার মানলো সিলেট। এরমধ্যে ঢাকার প্রথম পর্বেই হ্যাটিট্রিক হারের পায় মোসাদ্দেক-মিঠুনদের সিলেট।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিলেট থান্ডারের বিপক্ষে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্বান্ত নেন চট্টগ্রামের অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ব্যাট হাতে নেমে বেশ সর্তক ছিলো ঢাকা পর্বে তিন ম্যাচেই হারা সিলেট। দুই ওপেনার রনি তালুকদার ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে ফ্লেচার ৩ ওভারে মাত্র ১৩ রান যোগ করেন। তবে চতুর্থ ওভারে বিচ্ছিন্ন হয় তাদের জুটি। ৯ বলে ২ রান করা রনিকে ফেরান বাঁ-হাতি পেসার মেহেদি হাসান রানা।
পরের ওভারে সিলেটের দ্বিতীয় উইকেট তুলে নেন আরেক ওপেনার রুবেল হোসেন। আফগানিস্তানের শফিকুল্লাহ ৬ রানের বেশি করতে পারেননি। ২৩ রানে ২ উইকেট হারানো সিলেটকে এরপর চাপ থেকে রক্ষার চেষ্টা করেন ফ্লেচার ও উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ মিঠুন। ৩৩ বলে ৩৯ রান যোগ করেন তারা। বড় হতে থাকা জুটিতে ভাঙ্গন ধরান পেসার মুক্তার আলী। ৩৮ রান করে মুক্তারের বলে বোল্ড হন ফ্লেচার।
ধীরলয়ে খেলে উইকেটে সেট হবার চেষ্টা করে বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ মিঠুন। ১৭ বলে ১৫ রান করে রানার দ্বিতীয় শিকার হন তিনি। মিঠুনকে শিকারের পর ওভারের শেষ বলে আরেক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ৩ রান করা জনসন চালর্সকে ফিরিয়ে দেন রানা। এমন অবস্থায় ৬৯ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে দ্রুত গুটিয়ে যাবার শংকায় পড়ে সিলেট।
কিন্তু সেটি হতে দেননি অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন ও নাইম হাসান। ষষ্ঠ উইকেটে ৩৬ বলে ৪০ রানের জুটি গড়ে দলকে ভদ্রস্থ সংগ্রহ এনে দেয়ার পথ তৈরি করেন তারা। শেষ পর্যন্ত মোসাদ্দেকের ২২ বলে ৩০ ও নাইমের ১১ রানের সুবাদে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১২৯ রানের ভদ্রস্থ সংগ্রহ পায় সিলেট। চট্টগ্রামের রানা ৪ ওভারে ২৩ রানে ৪ উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ১৩০ রানের সহজ লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৪ ওভারের মধ্যেই ২ উইকেট হারায় চট্ট্রগাম। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলার ক্রিসমার স্যান্টোকির বলে আউট হন ৫ রান করা আবিস্কা ফার্নান্দো ও ৬ রান করা ইমরুল কায়েস।
শুরুতে ২ উইকেট হারিয়েও চাপ অনুভব করেনি চট্টগ্রাম। কিন্তু পঞ্চম ওভারে অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহর আউটে চিন্তা বেড়ে যায় চট্টগ্রামের। মাত্র ২ রান করে পেসার এবাদত হোসেনের বলে বোল্ড হন মাহমুদুল্লাহ। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের শ্যাডউইক ওয়ালটন মাত্র ৯ রান করে আউট হলে চট্টগ্রামের হতাশা বাড়িয়ে দেন।
এ অবস্থায় ঘুড়ে দাঁড়ানোর পথ খুঁজে চট্টগ্রাম। নুরুলকে নিয়ে বড় জুটির চেষ্টা করেন দলের ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ওপেনার লেন্ডন সিমন্স। ফার্নান্দোর সাথে ওপেন করতে নেমে অন্যপ্রান্ত দিয়ে দলের সতীর্থদের পতন দেখেছেন তিনি। পাশাপাশি রানের চাকা সচল রেখেছেন এই ডান-হাতি। কিন্তু ব্যক্তিগত ৪৪ রানে নুরুলের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে থামতে হয় সিমন্সকে। ৩টি করে চার-ছক্কায় ৩৭ বলে নিজের ইনিংসটি সাজান সিমন্স।
সিমন্সের বিদায়ের পর রানের খাতা খোলার আগেই মুক্তারকে তুলে নিয়ে সিলেটকে প্রথম জয়ের স্বপ্ন দেখান স্যান্টোকি। পরের ওভারে পরপর দু’টি ছক্কায় আত্মবিশ্বাস ধরে রাখার চেষ্টা করেন নুরুল। নুরুলের পথ অনুসরণ করে ১৬তম ওভারে একটি ছক্কা মারেন উইলিয়ামসও। তাই কিছুটা চলে চাপমুক্ত হয় চট্টগ্রাম। কারন শেষ চার ওভারে ২৪ রান দরকার পড়ে তাদের। হাতে ছিলো ৪ উইকেট।
তবে শেষ ২৪ রান তুলতে পরবর্তীতে মাত্র ১২ বল খেলেছেন নুরুল-উইলিয়ামস জুটির। দু’জনই এ সময় ১টি করে চার-ছক্কা মারেন। ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ২৪ বলে অপরাজিত ৩৭ রান করেন নুরুল। আর ১টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৭ বলে অপরাজিত ১৮ রান করেন উইলিয়ামস। সিলেটের স্যান্টোকি ৪ ওভারে ১৩ রানে ৩ উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন চট্টগ্রামের বোলার রানা।